পিরিয়ড এবং পিউবার্টি: পরিবর্তনের সময়, যত্ন এবং সচেতনতা

পিরিয়ডের A to Z

পিউবার্টি অ্যান্ড পিরিয়ড

পিউবার্টি ঠিক কোন সময়টাকে বলে? একটি মেয়ের শরীর এবং মনে কী কী পরিবর্তন আসে তখন? পিরিয়ডের সঙ্গে পিউবার্টির কী সম্পর্ক? জানাচ্ছেন কনসালট্যান্ট অবস্টেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনিকলজিস্ট ডা. প্রসেনজিৎ সরকার ও মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায়।

পিউবার্টি ও তার প্রকৃতি

‘পিউবার্টি’ শব্দটি আমরা সকলেই জানি, কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। অনেকেই মনে করেন পিউবার্টি এবং কিশোরীবেলা একই, কেউ আবার মনে করেন পিরিয়ড শুরু হওয়ার অর্থই পিউবার্টি শুরু।

পিউবার্টির হাত ধরে যে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন আসে, সেগুলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকার ফলে অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এটি কাম্য নয়, কারণ যদি সঠিক তথ্য জানা না থাকে, তাহলে ছোট মেয়েরা আরও বেশি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।

মেনস্ট্রুয়েশন: স্বাভাবিক প্রক্রিয়া

মেনস্ট্রুয়েশন একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা নিয়ে লজ্জা বা সংকোচের কিছু নেই। পরিবারের বড়দের উচিত মেয়েদের বুঝিয়ে বলা যে এটি শরীরের একটি স্বাভাবিক অংশ।

পিউবার্টির সময় কিছু সাধারণ মেডিক্যাল সমস্যা

  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS):
    • এটি পিউবার্টির সময় দেখা দিতে পারে।
    • প্রধান কারণ: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
    • প্রভাব: ডায়াবেটিস, লিপিড সমস্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি।
    • নিয়ন্ত্রণের উপায়: ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
  • প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS):
    • উপসর্গ: শরীর ফুলে যাওয়া, মাইগ্রেন, অবসাদ, বিরক্তি।
    • চিকিৎসা: প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সেক্সুয়াল হেলথ ও সচেতনতা

ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে সারভাইক্যাল ক্যানসার অন্যতম বড় সমস্যা। তবে এটি আটকানো সম্ভব, যদি মেয়েরা প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার আগেই অ্যান্টি-ক্যানসার ভ্যাকসিন গ্রহণ করে।

মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তন

পিরিয়ড শুরু হলে অনেক মেয়েই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে মানসিক অস্বস্তি অনুভব করে। তাই পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে মানসিকভাবে সাহায্য করা যায়?

  • প্রাথমিক প্রস্তুতি:
    • পিরিয়ডের আগে মেয়েদের সঠিক তথ্য প্রদান করা উচিত।
    • অনেকের আট-ন’বছর বয়সেই পিরিয়ড শুরু হতে পারে, তাই আগেভাগেই সচেতন করা জরুরি।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:
    • পিয়ার গ্রুপ বা বন্ধুদের মন্তব্য মেয়েটির আত্মবিশ্বাস নষ্ট করতে পারে।
    • শরীরের পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শেখানো দরকার।
  • মুড সুইং:
    • প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের কারণে অনেক মেয়ের মুড সুইং হয়।
    • এটি কখনও কখনও প্রি-মেনস্ট্রুয়াল ডিস্পোরিক ডিজঅর্ডার (PMDD)-এ রূপ নিতে পারে, যা গুরুতর বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে।
    • বাড়ির বড়দের এটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

মেনস্ট্রুয়াল ব্যথা ও সমাধান

  • অনেক মেয়েই পিরিয়ডের সময় ব্যথায় কষ্ট পায়।
  • পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের উচিত তাদের কষ্টকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া।
  • যদি ব্যথা অসহনীয় হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দেরিতে পিরিয়ড শুরু হওয়া

  • অনেক মেয়ের পিরিয়ড দেরিতে শুরু হয়, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
  • এটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যের অংশ হতে পারে।
  • পরিবারের উচিত এ নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা

  • পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করা জরুরি।
  • পর্যাপ্ত জলপান, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং শারীরিক ব্যায়াম মেনস্ট্রুয়াল সমস্যাগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

টিনএজার সেক্স ও সচেতনতা

  • টিনএজার সেক্স একটি বাস্তবতা।
  • এটি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা প্রয়োজন।
  • সঠিক তথ্য প্রদান করলে কিশোরীদের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা কমে।
  • সেক্স এবং কন্ট্রাসেপশন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

উপসংহার

পিরিয়ড এবং পিউবার্টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যদের উচিত মেয়েদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে তারা যে কোনও বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে। সঠিক শিক্ষা এবং সহমর্মিতা মেয়েদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *